Munna

প্রকাশিত হয়েছেঃ সোমবার, ২৭শে মে ২০২০
রেমিট্যান্স যোদ্ধা অর্থাৎ প্রবাসীদের উদ্দেশ্যে আজকের এই লেখা। 
প্রবাসীরা এমনিতেই ভীষণ কষ্টের মধ্যে দিনযাপন করছে। অনেকের চাকুরী নেই। তাতে তাদের মানষিক অবস্থাও খারাপ। তার মধ্যে মাননীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রীর একটি বক্তব্যকে ভুল ভাবে উপস্থাপন করে কিছু স্বার্থান্বেষী কুচক্রী মহল প্রবাসীদের খেপিয়ে তুলছে।

তবে এতে রেমিট্যান্স যোদ্ধাদের দোষ নয়। কুচক্রী মহলটি এই রেমিট্যান্স যোদ্ধাদের দিয়েই ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করতে চাইছে। আর এতে স্বার্থান্বেষী কুচক্রীদের ফায়দা বেশী হবে। তারা রেমিট্যান্স যোদ্ধাদের সামনে এনে তাদের স্বার্থ হাসিলের জন্য উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে অত্যন্ত সহজ সরল কথাকে ঘোলাটে করে পাবলিক সেন্টিমেন্টে আঘাত করছে।

বর্তমানে বৈশ্বিক যেই মহামারী করোনাভাইরাস এই সময়ে যদি রাষ্ট্রের প্রথম সারির মন্ত্রীকে নিয়ে উদ্দেশ্যে প্রণোদিতভাবে হেয় করা যায়, তাতে রাষ্ট্রের ভাবমূর্তি নষ্ট হওয়া সহ দেশকে বড় ধরণের খেসারত দিতে হবে। তাই প্রবাসীরা কিছু বলার আগে যাচাই-বাছাই করে সঠিক তথ্য টি জেনেই বলুন এতে আমরাও পাশে আছি।

জানুন আমাদের পররাষ্ট্রমন্ত্রী কি বলেছেন। মনে রাখবেন মাননীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রীও একজন প্রবাসী ছিলেন।

পররাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে প্রশ্ন ছিলো, করোনার কারনে বিভিন্ন দেশে কর্মহীন হয়ে পড়া প্রবাসীরা দেশে এলে কি ধরণের পরিস্থিতির সম্মুখীন হবে বাংলাদেশ।

উত্তরে তিনি বলেছেন, "প্রবাসীরা যথেষ্ট স্মার্ট। তারা যেভাবেই হোক না কেন কোন না কোন ভাবে পরিস্থিতি সামলে নিবে। চাকরি যোগাড় করে নিবে। এমনটা আমার বিশ্বাস।"

তারপর ও যদি একসাথে এত লোক আসে তাহলে কি হবে? এমন প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, "দেশে এত লোকের আপাতত কর্মসংস্থান নেই বললেই চলে। এমনিতেই বেকারের (বেকারত্ব) সংখ্যা বেশি। যথেষ্ট কর্মসংস্থান নেই। ১০ থেকে ১৫ লাখ লোকের চাপ সামলানো কঠিন হবে। বেকারত্ব বেড়ে যাবে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হবে এবং চুরি চামারি বেড়ে যেতে পারে।"

মাননীয় মন্ত্রী খুব পরিষ্কার ভাবে বলেছে, বেকারত্বের কারনে দেশের আইনশৃংখলা পরিস্থতির অবনতি হবে চুরি চামারি বেড়ে যাবে।

অনেকেই প্রচার করছেন, উনি প্রবাসীদের চোর বলেছেন। সবার আগে ভিডিওর কথাগুলো বুঝার চেষ্টা করুন তারপর দৌঁড় ঝাঁপ দিন চিলের পেছনে, চিলে কান নিয়ে গেছে শুনেই চিলের পিছনে না ছুটে আগে ভালো করে দেখুন চিল কান নিয়েছে কিনা? আমি মনে করি প্রবাসী যোদ্ধা হই কিংবা দেশের হই, দেশের স্বার্থ সবার আগে।

কিছু কিছু লোক আছে যাদের উদ্দেশ্য ট্রল করতে হবে, ভিডিও বানিয়ে ভিউ বাড়িয়ে পয়সা কামাতে হবে, ফেসবুকে বেশি লাইক পেতে হবে। আমরা এর আগেও দেখেছি, নবাবজাদা নিয়ে, আমেরিকা পিপিই চাইছে এগুলো নিয়েও ট্রল করেছেন।

তাছাড়া মাননীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী সব সময় সোজাসুজি কথা বলেন। কথা ঘুরিয়ে পেঁচিয়ে না বলে, কে কি মনে করবে, না করবে সেটা না ভেবে সঠিক কথা মুখের উপরে বলে দেন। এটা নিয়ে আবেগী বাঙালী আমরা না বুঝেই মনঃক্ষুন্ন হই।

করোনা ভাইরাস যখন বাংলাদেশে ছড়িয়ে পড়ার আশংকা তৈরী হলো তখন প্রবাসীদেরকে কোয়ারেন্টাইনে নেয়ার সিদ্ধান্ত নিলো সরকার। ঐ পরিস্থিতিতে যখন কিছু প্রবাসী নিজের দেশে এসে কোয়ারেন্টাইনে থাকবেন, সেটা মেনে নিতে না পেরে অনেক বেশি বিশৃঙ্খলা করেছিলেন, সেই সময়ে সাংবাদিকের এক প্রশ্নের জবাবে মাননীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছিলেন- আমাদের প্রবাসীরা আসলে নবাবজাদা! তারা সবকিছু পাঁচ তারকা মানের চান, কিন্তু আমাদের তো সেরকম সক্ষমতা নেই।

এই মন্তব্য নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ঝড় উঠলো। প্রবাসীদের নবাবজাদা বলে ফেলায় যেনো মহাভারত অশুদ্ধ করে ফেলেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। অথচ, অসচ্ছল পরিবারের কোনো সন্তান যখন পরিবার থেকে সক্ষমতার চেয়ে বেশি সুবিধা চায়, মা, বাবা কিন্তু তখন তাদেরকেও নবাবজাদা বলে থাকেন।

অথচ, প্রবাসীদের কঠোরভাবে কোয়ারেন্টাইনের না রাখার ফলে যখন সারাদেশে করোনা ছড়িয়ে পড়লো, তখন আমরা বুঝলাম প্রবাসীদের দেশে ফিরে আসার ক্ষেত্রেও দেশের স্বাস্থ্য নিয়ে চিন্তা করতে হবে সবার আগে। প্রবাসী যোদ্ধা হই কিংবা দেশী যোদ্ধা হই, দেশের স্বার্থ সবার আগে।

এরপর পররাষ্ট্রমন্ত্রী বললেন- আমেরিকা, ইউরোপের দেশগুলো আমাদের কাছে মেডিকেল সরঞ্জামাদি চেয়েছে। আমরা হাসাহাসি করলাম। কারন, মেডিকেল ইকুইপমেন্ট বলতেই আমরা ভেন্টিলেটর মনে করেছিলাম। মাস্ক, পিপিই যে মেডিকেল ইকুইপমেন্ট এগুলো আমরা না বুঝেই তাকে নিয়ে হাসিঠাট্টা করলাম। এরপর দেখলাম বেক্সিমকো ৬৫ লাখ পিপিই রপ্তানি করছে।

আজকে সকালে ঘুম থেকে উঠেই দেখি, পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রবাসীদের চোর বলেছেন এমন লেখালেখিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম সয়লাব। খুঁজতে খুঁজতে ভিডিও পেয়ে তার বক্তব্য শুনলাম। তিনি যা বলেছেন তার সারাংশ হলো- প্রবাসীরা দেশে চলে আসলে আনএমপ্লয়মেন্ট (বেকারত্ব) বাড়বে, এমনিতেই আমাদের আনএমপ্লয়মেন্ট বেশি। এর মধ্যে যদি ১৫ লাখের মত লোক চলে আসে তাহলে আমাদের জন্য কঠিন হয়ে যাবে। আইনশৃঙ্খলার অবনতি হবে, চুরি-চামারি বেড়ে যাবে।

এই কথার অর্থ এই না যে প্রবাসীরা চোর। এতো প্রবাসী এক সাথে আসলে বেকারত্ব যেটা এমনিতেই বেশি সেটা আরও বেড়ে যাবে। আর বেকারত্ব বাড়লে চুরি-ডাকাতি বাড়বেই, আইনশৃঙ্খলার অবনতি ঘটবেই।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী বিদ্বান ব্যক্তি। তিনি যা আগে বুঝেন আমরা তা ঘটার পরে বুঝি। এই রকম লোকের কথা নিয়ে প্রথমে হাসাহাসি হবে, অল্প শিক্ষিত লোকেরা এটা নিয়ে সমালোচনা করবে এরপর যখন বুঝবে যে ঘটনা সত্যিকার অর্থেই সত্য হচ্ছে তখন প্রলাপ বকা ছাড়া অন্য কোনো উপায় থাকবে না। যেমন শুরুতে সাবধানতা অবলম্বন না করায় বাংলাদেশে করোনা ভাইরাস এখন মহামারী আকার ধারণ করেছে।

এই জাতীয়  দুর্যোগের মুহূর্তে সব কুচক্রীদের হুশিয়ার করে দিয়ে বলতে চাই আপনারা আওয়ামী লীগের মধ্যে বিভাজন তৈরী করা থেকে বিরত থাকুন।

মুন্না সৈকত
আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক 
ডাবলিন আওয়ামী লীগ